Wednesday, August 14, 2019

Page 4
[ Genre- Mystery | Page- 4 | Date- 14/08/2019 ]
~পেঁচি~
  আমি যতবার ওর দিকে তাকিয়ে কথা বলতে গেছি ঐ কাজল পড়া গভীর চোখে চোখ পড়তেই ততবার বেবাক আটকে গেছি ! কি বলব না বলব ভাবতে ভাবতেই সে বলে উঠল--- "এবার আমি আসি... আর শোন তুই খুব অবিশ্বাসী !" 
কথা শেষ হতে না হতেই একরকম ছুটে সে গলির আরো ভেতরে ঢুকে কোথায় যেন গা ঢাকা দেয়। আমিও কিছু বুঝতে না পেরে একবার ডাকতে গেলাম কিন্তু নামটা কি যেন... হ্যাঁ মনে পড়েছে, ডাক দিলাম--- "এই পেঁচি..."। গলির মধ্যে একটা লোক পাশ দিয়ে পেরোচ্ছিল সে আমার ওরকম আচমকা ডাক শুনে অবাক হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল আমার দিকে ! 
আমি সময় নষ্ট না করে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে ওর পেছনে এগোই কিন্তু কিছুটা গিয়েই আর পাত্তা করতে পারিনা, সামনে বেশ কয়েকটা গলির মোড় রয়েছে। কোন দিকে গেল তা জানিনা। অগত্যা বাইক ঘুরিয়ে নিয়ে আবার মেইন রোডে উঠে এলাম। 
মজার পাগলীটা কি ভূতটা কোথায় থাকে তার আসল নাম কি আরো যা কিছু জানবার ছিল সেসব কিছুই জানা গেল না, তাতে আমার কি দোষ ? ওরই যখন ইচ্ছা নেই নিজের নামধাম জানানোর, বাড়ি চেনানোর তখন হ্যাংলার মত পিছু ধাওয়া করা মানায় না। ও পাগল হতে পারে মানে 'পাগলী' হতে পারে আমি পাগল না ! 
বাড়ি ফিরে খাওয়া সেরে ঘুমোতে যাব, সেই সময় ভাবলাম আমার সে বান্ধবীটাকে একবার শুধাই ওর বাড়িতে আমার সামনের চেয়ারে এসে বসা মেয়েটার সম্পর্কে। কিন্তু পরক্ষণেই মনে হল--- নাঃ থাক, ওর বাড়ির পরিস্থিতি যেমন তাতে এরকম একটা প্রশ্ন এখন করাটা ঠিক হবে না। রাতও হয়েছে বেশ, ক্লান্তি অনুভব করলাম, ঘুম চলে এল।

আজ সকালে উঠে অবধি কালকের ওসব কথা মনেই ছিলনা একদম। বুধবার ছুটির দিন, এইদিন আমি প্রায়ই হয় কোনো বন্ধুর সাথে কিম্বা একাই চলে যাই আমাদের কলেজের পেছনে একটা ঘাট বাঁধানো বড় পুকুর আছে সেখানে, বসে থাকি গল্প করি, একটা দুটো সিগারেট খাই, দুপুরে ফিরে আসি। 
রেডি হয়ে বেরোতে যাব এমন সময় বাবা বলে উঠলো--- "বেরোচ্ছিস যখন ফেরার পথে মিষ্টি আনিস বিকেলে আমার দুজন colleagues আসবে।" 
এটা শুনেই চট্ করে কাল সন্ধ্যার কথাটা মনে পড়ে গেল--- পেঁচি, সেও নাকি মিষ্টি খুব পছন্দ করে ! আর মনে পড়তেই বেশ অনেকটা রাগ হল ওর উপর। কেন ওরকম পালিয়ে গেল তখন ? আমি খারাপ কিছু তো বলিনি ওকে। যাই হোক ওর কথাটা মাথা থেকে ঝেরে ফেলে বাইক নিয়ে বেরিয়ে মিষ্টির দোকান থেকে তিন রকমের ৪ খানা মিষ্টি কিনে সোজা ঐ পুকুর পাড়ে হাজির হলাম। আজ আর কোনো বন্ধুকে ফোন করিনি এখানে আসার জন্য। মনটা উদাস হয়ে যাচ্ছে... কেন জানিনা ! আশপাশের পরিবেশ কেমন একটা গুমোট হয়ে পড়েছে। 
পুকুর পারে বসে বুক পকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে ঠোঁটের কোণে রাখলাম, দেশলাই বের করে ধরানোর চেষ্টা করলাম। দেশলাই জ্বললো না। আরো একটা কাঠি বার করে সাবধানে হাওয়া আগলে ধরানোর চেষ্টা করলাম আবার জ্বললো না। ধুত্তোর ভেজাল ভরা দেশলাই... এরকম দশ বারোটা কাঠি জ্বালানোর বৃথা চেষ্টা করতে করতে বিরক্ত হয়ে গেলাম। এখানে কোনো হাওয়া-ই নেই যে তার জন্যে দেশলাই নিভে যাচ্ছে বারবার। বারুদ কাঠি সব খটখটে শুকনো তাও স্ফুলিঙ্গ ওঠা মাত্রই নিভে যায়। এবার ভাবলাম--- নাঃ কারো কাছে গিয়ে ধরিয়ে আনি... 
হঠাৎই বিদ্যুৎ চকিতে মনে পড়ে গেল ঐ পাগলী 'পেঁচি' -টার কথা, ও বলেছিল--- "সেটা আসলে আমি কাছে থাকলে জ্বলে না !" 
আমার কানে সেই কথাটাই বাজতে লাগলো বারবার !!! 
মাথার ভেতর সব গুলিয়ে যাচ্ছে যে... এবার আমার চোখ পড়ল পাশে রাখা মিষ্টির প্যাকেটে। তাতে দুটো পান্তোয়া, একটা রসমালাই, একটা হীরামণি রয়েছে। পেঁচির মিষ্টি খুব প্রিয় তো ! মনের ভেতরটা কেঁদে উঠল; আর এক মূহুর্ত দেরি না করে প্যাকেটটার মুখ খুলে দিয়ে পুকুর পারে একটা গাছের দুই ডালের মাঝে সেটা রেখে বললাম--- "পেঁচি... কাল তোকে ওরকম অবিশ্বাস করার জন্য Sorry... এটা তোর জন্য রেখে গেলাম !" 
অজান্তেই চোখের কোল বেয়ে দু ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়েছে আমার। মনে অদ্ভুত একটা শান্তি পেলাম... পুকুর পার থেকে উঠে এসে বাইকে স্টার্ট দিতে গিয়ে দেখি স্টার্ট নিচ্ছে না, যদিও পর্যাপ্ত petrol আছে তাতে। সেটা আর স্টার্ট করার চেষ্টা না করে সেই মিষ্টি রেখে আসা গাছটার দিকে পাগলের মত ছুটে গেলাম, গিয়ে দেখি--- ফাঁকা প্যাকেট পড়ে রয়েছে একটাও মিষ্টি নেই সেখানে ! আর তখনই এক দমকা হাওয়ার সাথে কানে ভেসে এল বাচ্চাদের মত সেই পাগলী পেঁচি-টার মিষ্টি গলায়, মায়া মাখা হাসি.....

--------------------


Esc to 'Story Section'

Story Section

Esc to 'Index Page'

Index Page

1 comment: